কে তােমার রব?
অনেক দিন আগের কথা। এক গ্রামে এক ব্যবসায়ী ছিল। লােকটির নাম ছিল আযর। সে মূর্তি বেচা-কেনা করত। তার গাঁয়ের লােকজন ছিল মূর্তিপূজারি। তারা বিভিন্ন মূর্তির পূজা করত। বিপদে-আপদে মূর্তির কাছে সাহায্য চাইত।
মানুষের এই সব কার্যকলাপ দেখে একটি ছেলে খুব অবাক হতেন। তিনি ছিলেন আযরের ফুটফুটে সন্তান। তাঁর নাম ছিল ইবরাহীম । সে ছিল খুব বুদ্ধিমান। তিনি ভাবতেন, মানুষগুলাে কত বােকা! এরা মূর্তির পূজা করে। অথচ মূর্তি খাবার খেতে পারে না। নড়াচড়া করতে পারে না। একটি মাছিও তাড়াতে পারে না। তবুও কেন মানুষ মূর্তির পূজা করে?
ইবরাহীম (আ) ভাবলেন, মানুষকে সাবধান করা দরকার। তিনি বাবার কাছে গেলেন। গিয়ে বললেন, ‘আব্বু! তােমরা কেন মূর্তির পূজা করাে?
আযর অনেক রেগে গেল। ছেলেকে ধমক দিল। এরপর বলল, ‘ছেলে আমার! এইসব কথা বােলাে না আর। ওরা আমাদের দেবতা। আমাদের সাহায্যকারী।
ইবরাহীম (আ) থামলেন না। তিনি গাঁয়ের লােকদের কাছে গেলেন। গিয়ে বললেন, ‘মূর্তি তাে কিছুই করতে পারে না! কিছুই দিতে পারে না! তবুও তােমরা কেন মূর্তির পূজা করাে?' লােকজন তাঁর কথায় বিরক্ত হলাে। সবাই যার যার কাজে চলে গেল।
ইবরাহীম (আ) মনে মনে বললেন, দাঁড়াও, দেখাচ্ছি মজা। মূর্তি যে কিছু করতে পারে না, এবার সেটা হাড়ে হাড়ে টের পাবে। সেদিন ছিল মেলার দিন। লােকজন মেলায় চলে গেল। ইবরাহীম ও গেলেন না। তিনি বাড়িতেই থেকে গেলেন। হাতে একটি কুড়াল নিলেন। এরপর মূর্তির ঘরে ঢুকলেন।
তিনি কুড়াল দিয়ে মূর্তির ঘাড়ে আঘাত করতে লাগলেন। মূর্তিগুলাে। ভেঙে চুরমার হতে থাকল। একে একে সব মূর্তি ভেঙে ফেললেন। তবে সবচেয়ে বড় মূর্তিটাকে কিছু করলেন না। কুড়ালটা ওটার ঘাড়ে ঝুলিয়ে দিলেন। এরপর সেখান থেকে চলে এলেন।
আস্তে আস্তে রাত ঘনিয়ে এলাে। চাঁদের আলাে ছড়িয়ে পড়ল। চাঁদটা বেশ সুন্দর দেখাচ্ছিল। ইবরাহীম ) চাঁদের দিকে তাকালেন। এরপর বললেন, ‘চাঁদই আমার রব।' ভাের হবার আগেই চাঁদ ডুবে গেল।
সূর্য উদিত হলাে। সূর্যের আলাে চারদিকে। ছড়িয়ে পড়ল। ইবরাহীম (9) বললেন, ‘সূর্য তাে চাঁদের চেয়ে আরও বড়। সূর্যই। আমার রব!' সন্ধ্যা হতে-না-হতেই সূর্য অস্ত গেল। তখন তিনি ভাবলেন, চাঁদ ও সূর্য তো একসময় হারিয়ে যায়। এগুলাে কখনও রব হতে পারে না। তিনি চিন্তা-ভাবনা করতে লাগলেন। নিজের বিবেক-বুদ্ধি খাটালেন। আর আল্লাহ তাঁকে হিদায়াত দান। করলেন। এরপর ইবরাহীম ) বললেন, ‘চাঁদ ও সূর্য আমার রব নয়। এগুলাে যিনি বানিয়েছেন, তিনিই।
আমার রব। তিনিই আল্লাহ। আমি এক আল্লাহর দিকে মুখ ফিরিয়ে নিলাম।। আল্লাহর দয়ায় ইবরাহীম ও তাঁর রবকে চিনতে পারলেন। আল্লাহই আমাদের রব। আল্লাহর হুকুমেই সূর্য উদিত হয় তাঁর হুকুমেই তা অস্ত যায়। আল্লাহর নির্দেশেই চাঁদ আলাে দেয়। আবার তাঁর হুকুমেই ডুবে যায়।
সবকিছু তিনিই সৃষ্টি করেছেন। তিনি একাই সবকিছু পরিচালনা করছেন। তাই আল্লাহ ছাড়া আমরা। কাউকেই সাজদা করি না। আর কারও ইবাদাত করি না।।
গল্পটি আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া (১/৩২৪) অনুসারে সাজানাে হয়েছে।